সাহারার এক প্রজ্জলিত মরক্কো
সাহারার এক প্রজ্জলিত মরক্কো

সাহারার এক প্রজ্জলিত মরক্কো: তখন খোলাফায়ে রাশেদার জামানা শেষ হয়ে শাসন ক্ষমতা হজরত মুয়াবিয়া (রা.) এর হাতে ন্যস্ত। বর্তমান মরক্কো ছিলো তখন অত্যাচারী রোমান সম্রাজ্যের অন্তর্গত। অত্যাচার এবং নিপীড়নের সূত্রে গাঁথা রোমান শাসকেরা জুলুমের স্টিমরোলার চালাতে থাকে অধিকৃত মরক্কোর স্থানীয় বার্বার অধিবাসীদের প্রতি।
ভিনদেশী রোমানদের নিপীড়নে আফ্রিকার এ জনপদ মজলুমের করুণ আর্তনাদে কম্পিত হচ্ছিল। এ বিভীষিকা সহ্য করতে না পেরে বার্বার জনগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দ সহায়তার আহ্বান জানান তৎকালীন মিসরের শাসনকর্তা সাহাবী আমর ইবনে আস এর কাছে। আমর ইবনে আস নিপীড়িত মজলুমের আর্তনাদ পৌঁছে দেন মুসলিম জাহানের তৎকালীন খলিফা হজরত মুয়াবিয়া (রা.) এর কাছে। রোমান শাসকদের এরূপ বর্বরতা আর মরক্কোর বার্বার দের করুণ আর্তনাদ ব্যাথিত করে তোলে খলিফাকে। তিনি সেনাপতি সাহাবি উকবা ইবনে নাফে (রা.)-এর নেতৃত্বে এক সেনাদল পাঠান মরক্কোর পানে। এভাবেই ৬৮৩ খ্রি. মরক্কোয় উড্ডীন হয় ইসলামের কালেমা খচিত পতাকা। বার্বাররা মুক্ত হয় রোমান শাসকদের করালগ্রাস থেকে।
ইসলামের পথে জনপদ
মূলত এরপর থেকেই বার্বাররা ইসলামের নীতি আদর্শে মুগ্ধ হয়ে একে একে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে প্রবেশ করতে থাকে। এভাবেই মরক্কোর মরুর বুকে উদিত হয় ইসলামের আহ্বান। আর তার তার দেদীপ্যমান আলোকরশ্মি আলোকিত করে তোলে জনপদের পর জনপদ।
ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে বারবার আর যাযাবরদের জীবনযাত্রা। উন্নত আরবীয় জীবনাচরণ আর সংস্কৃতি তাদেরকে দেয় এক নবজন্ম। অগ্রসর করে তোলে সভ্যতার নতুন দিগন্তে।
এরপর নানাবিধ বিবর্তন আর পালাবদলের মধ্যে দিয়েই আজকের মরক্কো। এখানে একসময় চলেছে ফরাসী ঔপনিবেশিক শাসন। আবার স্পেনও ভাগ বসিয়েছে এখানে। একসময় ইউসুফ বিন তাশফিনের ঝলকেও আলোকিত হয়েছে মরক্কোর জনপদ।
অধঃপতনের ধ্বনি
তবে মরক্কোর বর্তমান রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ তার বিভিন্ন উদারপন্থী মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বেশ কিছু বিতর্কিত পরিবর্তন এনেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো বোরকা বিক্রি নিষিদ্ধ এবং ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক।
এর মধ্যে বোরকা বিক্রি নিষিদ্ধ দেশটির সরকারি কোনো আদেশ না হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ বলে দাবি বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের।
আর মূলত সাহারার বিভিন্ন স্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়ের মারপ্যাচে ফেলে মরক্কোর কাছ থেকে ইসরায়েলের স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছিলো ট্রাম্প প্রশাসন। যা তুমুল সমালোচিত হয়েছে মুসলিম বিশ্বে।
তবে মরক্কোর বর্তমান রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ এর এসব বিতর্কিত কর্মকান্ড অনুজ্জ্বল করে ফেলছে মরক্কোর গৌরবময় ইতিহাসকে। উদারপন্থী নামক পশ্চিমা সংস্কার ক্রমশ গ্রাস করছে মরক্কোর ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে। যার ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করছে রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ।
সেকুলারিজমের বিষবাষ্প
অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে উদাপন্থার বিষফোঁড়া যে জনপদে ঢুকেছে তাকে ছারখার করে দিয়ে গিয়েছে। ইরান তার জ্বলন্ত উদাহরণ। মাহশা আমিনির ঘটনা এবং উদারপন্থার বিভীষিকা কম্পিত করেছে ইরানের জনপদকে। নানা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সফল না হলেও উদারপন্থার বিষবাষ্প ছেড়ে একটু হলেও টলাতে সক্ষম হয়েছে ইরানকে।
আর বর্তমান সৌদি এবং মরক্কোয় উদারপন্থার ছোবল দেয়া হয়তো আরো ২ টি অস্থিতিশীলতার তালিকা দীর্ঘায়িত করবে।
এমনিতেই মরক্কোর মানুষ যথেষ্ট সভ্যতার আলোয় আলোকিত। ৯৯% মুসলিমের দেশে বহুকাল ধরেই ইহুদীরা সেখানে মিলেমিশে বসবাস করছে। যা কখনো প্রভাব ফেলেনি জীবনযাত্রায়। কিন্তু উদারপন্থার এসব বিষবাষ্প কি স্বাভাবিক রাখবে পরিস্থিতি।
এভাবে মুসলিম দেশগুলোর অধঃপতন হচ্ছে। দেশের স্বার্থ বিলীন করে নিমজ্জিত হচ্ছে দাসত্বের বেড়াজালে।
তবে দখলদার ইসরা*য়েলের সাথে রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও খেলা শেষে স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিনের পতাকা উড্ডয়ন প্রশংসা কুড়িয়েছে গোটা বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষদের।
ফুটবলের মতো বৈশ্বিক প্লাটফর্ম ব্যবহার করে স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিনের পতাকা উড্ডয়ন চপেটাঘাত করে সাম্রাজ্যেবাদ আর দখলদারিত্বের বিষবৃক্ষ রোপন করা শাসকদের মূলে।
স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন, এক মুক্ত জেরুজালেম, দখলদারিত্বের নিপীড়নের বিষবৃক্ষ শীঘ্রই মূলোৎপাটন হবে এটাই স্বাধীনতাকামী এ বিশ্বের কোটি জনতার প্রাণের আকূলতা।
পাশাপাশি মরক্কোয় আবার প্রজ্জ্বলিত হোক উকবা ইবনে নাফে (রা.) এর সেই আহ্বান। দিনশেষে এটাই প্রত্যাশা। সাহারার বুকে আবার পূর্ণভাবে ইসলামের আলোকবর্তিকা ফিরে আসুক।
আরো পড়ুনঃ সুপার গ্লু কেন নিজের টিউবের সঙ্গে আটকায় না?
– আইটেক বাংলার ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করতেঃ এখানে ক্লিক করুন।
– আইটেক বাংলার ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকতে এই পেজ ভিজিট করুন।
– আইটেক বাংলার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
– গুগল নিউজে আইটেক বাংলার সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন
– আইটেক বাংলার সাইটে লিখতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
– প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে নিয়মিত ভিজিট করুন www.itechbangla.com সাইট।